‘যাওয়ার আগে বলেছিল, বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরব’- এ কথা বলে কেঁদে ওঠেন বাবা কোরবান আলী।
তার মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন।
বাবা বলেন, শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আগের দিন গেল শপিং করতে ও তাদের এক আন্টির সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা।
জানা গেছে, বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে দুজন হলেন রিয়া ও আলিশা। তারা কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলীর মেয়ে। ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সাদিয়া আফরিন আলিশা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
একই ঘটনায় মারা গেছে তাদের খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। তিনি সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। তারা একসঙ্গে শপিং করতে গিয়েছিলেন। ফাঁকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে ঢোকেন।
কোরবান আলী বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা এলাকায় এসেছিল। কয়েক দিন বাড়িতে থেকে চলে গেছে। শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে আমিসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কেটেছিল। নিমু তাদের খালাতো বোন। সেও আর ফেরেনি। যাদের জন্য আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকত। আজ আমার ঘর শূন্য।
সরেজমিন চরবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। সবার চোখে পানি। নারীরা লাশের গাড়ির আশপাশে ভিড় করেছেন। কেউ লাশের গাড়ি ধরেও কাঁদছেন।
বাবা বলেন, যখন জীবিত মানুষ উদ্ধার শেষ হলো তখন আমার শরীর কাঁপছিল। রাত ১০টার দিকে আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হলো। যে মেয়েকে সন্ধ্যায় ভালোভাবে বিদায় দিয়েছি, তার পোড়া লাশ পেলাম। লাশ নিয়ে বাড়ি এসেছি। বিকালে পুকুর পাশের কবরস্থানে রেখে আসব আমার দুই স্বপ্ন।